newsbazar 24:বাঙালি মানেই দুর্গাপূজা। বাঙালির তেরো পার্বণের শ্রেষ্ঠ উৎসব এই দুর্গাপূজা। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দূর্গোৎসবের শুরু কিভাবে ,প্রথম দুর্গাপূজা কারা করেন বারোয়ারি পূজা কবে থেকে শুরু এসব নিয়ে পুরানের কথার পাশাপাশি ইতিহাসের সঙ্গে মিশে গেছে জনশ্রুতি।
দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল প্রাচীনকালে। পুজো শুরুর যথার্থ নথি পত্র ঠিকমতো পাওয়া না গেলেও বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার পরিচয় পাওয়া যায়।কিছু ঐতিহাসিকের মতে সম্ভবত মুঘল আমলে থেকেই ধনী পরিবারগুলোতে দুর্গাপূজা শুরু করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় দেবীর পূজা সম্ভবত ১৫০০ শতকের শেষদিকে প্রথম শুরু হয়। যৈগিক মতে সম্ভবত মুঘল আমল থেকেই ধনী পরিবার গুলোতে দুর্গাপুজো শুরু হয়। সম্ভবত দিনাজপুর মালদার কিছু জমিদার স্বপ্নাদেশের পর প্রথম পারিবারিক দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন। তবে দুর্গার রূপ ছিল অন্যরকম ।তাদের লেখা অনুযায়ী আদি দুর্গার চোখ ছিল গোলাকার উজ্জ্বল এবং দেবী সাদা বাঘ ও সবুজ সিংহের উপর বিরাজ করতেন।
বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ বাংলার দুর্গাপূজা এক চলমান ইতিহাস ‘ থেকে জানা যায় ১৫৯০ থেকে ১৬০৬ অবধি বাংলায় দুর্গোৎসবের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম গৌড়েশ্বর কংস নারায়ন রায়, রাজশাহী তাহিরপুরে রাজা এবং পরবর্তীকালে গৌড়ের সম্রাট ।তিনি বাংলায় সর্বপ্রথম আধুনিক দুর্গাপূজা শুরু করেন অবশ্য সেখানে দুর্গোৎসব ছিল রাজা, জমিদার এবং কিছু বনেদি পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ছিল ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দেখানোর মাধ্যম যেটা অনেকটাই প্রকাশ পেয়েছে বনেদি বাড়ীর চণ্ডীমণ্ডপ দুর্গা দালান স্থাপত্য রীতিতে ঠাকুরদালানে বহু ক্ষেত্রে অনেক ইতিহাস রয়েছে। এরপর বিভিন্ন গ্রামের হিন্দুরা যারা প্রতিবছর এই পুজো শুরু করেন।
যেমন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরদালানে পূজা বন্ধ হওয়ার পর মহর্ষির উদ্যোগে সেখানে সূত্রপাত হয় মাঘৎসবের। আবার কলকাতায় ১৬১০ সালে বরিশাল সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিল বলে জানা গেছে। এই সাবর্ণ পরিবারের চণ্ডীমণ্ডপে জব চার্নকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর রাজা নবকৃষ্ণ দেব লর্ড ক্লাইভের সম্মানে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গাপূজার মাধ্যমে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছিলেন বলে জানা যায়। সেখানে লর্ড ক্লাইভের আগমন ঘটেছিল। ব্রিটিশ অধীন বাংলায় এই পূজা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দুর্গাপূজা বা মা দুর্গাকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে পূজা করা হয়েছিল ।১৯১০ সালে কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বারোয়ারি পুজো শুরু হয় সনাতন ধর্ম সাহিত্য সভা বাগবাজারে সার্বজনীন দুর্গোৎসবের সূচনা করেন জনসাধারণের সহযোগিতায়। তারপর থেকেই গোটা বাংলায় দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এটি বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে পরিচিত। বাঙালির দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় এর সঙ্গে শিল্প সংস্কৃতির বিকাশ, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঁচানোর প্রয়াস আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।