news bazar 24 :এখন শরৎকাল ।শরতের আকাশে বাতাসে হিমের ছোঁয়া। দুর্গা পুজোর আনন্দ। পুজোর কয়েকদিন ছুটি। চলুন এবার এই ছুটিতে স্বল্প খরচে দু-এক দিনের জন্য নির্জন সমুদ্র সৈকতের আনন্দ উপভোগ করি।চট করে ঘুরে আসা যেতে পারে চাঁদিপুর। এখনও তেমন ভিড় হয়না বলেই এই সমুদ্রে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া যায়। আম বাঙালি পছন্দ করে দীঘা, পুরী, মন্দারমণি, শান্তিনিকেতন। তাই অনেকেই জানেন না সস্তা ভ্রমণের তালিকায় বেশ কিছু নতুন সৈকত যুক্ত হয়েছে। কলকাতা থেকে ঘণ্টা চারেকের পথ। দু ‘ রাত তিনদিন নিশ্চিন্তে আরাম করতে চাইলে চলে আসুন।উড়িষ্যার চাঁদিপুর।
ধৌলি এক্সপ্রেসে হাওড়া স্টেশন থেকে ভোর ছ ‘ টা নাগাদ ছাড়ে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই খড়্গপুর। আরও ঘণ্টাখানেক পর বালাসোর (বালেশ্বর)। নামতে হবে এখানেই। স্টেশন থেকে অটোভাড়া করে যেতে হবে চাঁদিপুর বিচ। হোটেল রয়েছে বিচের ধারেই। মূল শহর থেকে অনেকখানি পথ চাঁদিপুর। শহর ছাড়তেই বাড়িঘরহীন রাস্তা, খুবই শুষ্ক একঘেয়ে ভূমিরূপ। রাস্তার ধারে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গাছ পাশাপাশি।। চাঁদিপুর থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বেই বেশ কিছু ঘোরার জায়গা আছে। সিমলিপালের জঙ্গল তো আছেই, অতদূর না গেলেও কাছেই পুরনো রাজপ্রাসাদ, হাতির জন্য সংরক্ষিত জঙ্গল, মন্দির এসব তো আছেই।
নির্জন। বড় বড় ঝাউ বনে হাওয়া ঢুকে খেলা করছে। গরম বালি। একটু এগিয়েই বোল্ডার। তার উপরে জামাকাপড় রেখে অনেকে স্নান করছেন। খানিকটা হেঁটে এগোলেই নির্জন সমুদ্র। এখানে সৈকতে খালি পায়ে হাঁটা যায় না। গোটা সৈকত জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে গুঁড়ো গুঁড়ো শামুক, ঝিনুক। কাঁকড়ার খোলসও ছড়িয়ে রয়েছে এদিক ওদিক। আসলে মানুষ এসব জায়গায় কম আসে। তাই ঝিনুক কুড়ানো যায় । মৃত তারামাছ ও মাঝে মাঝে দেখা যায়।
সন্ধ্যাবেলা ভিড় থাকে । উড়িষ্যা পর্যটন দফতরের একখানা অথিতিনিবাস সমুদ্রের ধারেই। সামনে রয়েছে বসার বেঞ্চ, কারুকাজ করা আলোকস্তম্ভ এবং বাদামভাজা। হস্তশিল্পের দোকান, বেমানান চাউমিন, এগরোলও। বাঁধানো বসার জায়গায় যা আলো আছে তা সৈকতে পৌঁছায় না। অন্ধকার সমুদ্র, অনেক অনেক দূরে টিমটিমে আলো।
পরদিন ব্রেকফাস্ট করে চলুন নীলগিরি। হাইওয়ের একদিকে পাহাড়। ওই পাহাড়ের গায়েই নীলগিরি প্রাসাদ। নীলগিরি আসলে ব্রিটিশ আমলের প্রিন্সলে স্টেট। ১১২৫ সালে ছোটনাগপুরের কোনও এক রাজা এসে এখানে ভিত্তিস্থাপন করেন। রাজপুত ঘরানার লোকই ছিল এখানের বাসিন্দা। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই প্রিন্সলে স্টেটটিকে রাজাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। পরে ভারত স্বাধীন হলে নীলগিরি আলাদা শহর রূপে গড়ে ওঠে। এখন ভাঙাচোরা রাজপ্রাসাদ, জীর্ণ সিংহদুয়ার। দেওয়ালে রাজপুতানা চিত্রশিল্পের ভগ্নাবশেষ নিজাগড় প্যালেসে ‘ । এবারের গন্তব্য স্থল কুলডিহা জঙ্গল বনদপ্তর এর অনুমতি নিয়ে পারমিট করিয়ে ঢুকতে হবে জঙ্গলের পথে। প্রাসাদ থেকে বেশ খানিকটা রাস্তা। ঘন সবুজ শ্যাওলা গন্ধ, মোটা গাছের গুঁড়ি। পারমিট দেখিয়ে গাড়িশুদ্ধ ঢোকা যায় ভেতরে। একটা ছোট বাংলো মতোন জায়গা রয়েছে জঙ্গলে। গভীর জঙ্গলে যারা ক্যাম্প করে থাকতে চান তাঁদের জন্য বন দফতর এমন ব্যবস্থা করেছে। গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর এগিয়ে দূরে দেখা যায় সল্টপিট, হাতি এখানে খেতে আসে। আসলে একটা প্রশস্ত জায়গা, মাটিতে নুন মিশিয়ে হাতির জন্য সল্টপিট বানানো হয়েছে।
তিনশ সিঁড়ি পেরিয়ে পাহাড়ের গায়ে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দির । যদিও মন্দির বলতে তেমন বিশাল কিছুই না। একটা ছোট ঘর। প্রচুর আলতা সিঁদুর লাগানো দেওয়াল, মাথায় ধর্মীয় পতাকা উড়ছে। পাঁচটা শিবলিঙ্গ রয়েছে জলের ধারার নিচে।